কাপ্তাই প্রতিনিধি(রাঙ্গামাটি) ঐতিহ্যবাহী নারানগিরি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অর্ন্তগত কাপ্তাই উপজেলার একমাত্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনের ছুটি আজ প্রায় দীর্ঘ ০৬ মাস হতে চলল। নেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি,নেই কোলাহল,নেই পদচারনা,ঠিক একইভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদচারণা কিংবা উপস্থিতিও নেই।এরই মাঝে জানা গেল,জনাব অরুণ চন্দ্র দাশ,সহকারী প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) এর শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি তথা অবসর গ্রহন অদ্য ১০/৯/২০২০ইং তারিখ। যেহেতু শিক্ষাঙ্গন ছুটি সেহেতু ছোট্ট পরিসরে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক জনাব মোঃ ইমরান হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিদায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব জাহাঙ্গীর আলম মনছুরী,প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত),নারানগিরি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন বিদায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) জনাব অরুণ চন্দ্র দাশ।অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এবং সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।

শুরু হয় অনুষ্ঠানের ১ম পর্ব। সাবেক শিক্ষক মোঃ ইমরান হোসেনের উপস্থাপনায় উক্ত অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখেন লিনিয়েন্ট চাকমা,সহঃ শিক্ষক; সৈয়দ মোঃ মিজান,সহঃশিক্ষক(কাপ্তাই প্রতিনিধি,দৈনিক দেশ বার্তা); সোরেশ তঞ্চঙ্গ্যা,সহঃশিক্ষক; তড়িৎ বড়–য়া,সহঃশিক্ষক; জনাব বিপুল বড়–য়া,সিনিয়র সহঃশিক্ষক; কল্যানী বড়–য়া,সিনিয়র সহঃশিক্ষিকা,বিদয়িী সহকারী প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) জনাব অরুণ চন্দ্র দাশ এবং সর্বশেষে সভাপতি মহোদয় তার সমাপনি বক্তব্য পেশ করেন।

সকল বক্তা তাঁদের বক্তব্যে বিদায়ী শিক্ষকের কর্মময় জীবনের ¯ৃ§তিচারণ করেন এবং তাঁর সুস্থ,সুন্দর ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করেন। বক্তারা একে একে তাঁদের বক্তব্যে আরো বলেন,কর্মময় জীবনে এই মহান শিক্ষকের সাহচর্যে থেকে(বিদায়ী শিক্ষক)অনেক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজই করেছেন,শিখেছেন অনেক কিছুই,সহযোগিতাও পেয়েছেন সবাই,তাই সজ্ঞানে হোক কিংবা অজান্তে হোক অনেক ভুল-ত্রæটি হয়েছে,সব কিছুর জন্যই আজ সকলে অনুতপ্ত এবং এটুকুই বলেন,তা সব যেন মনে পোষে না রাখেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।বিদায় অনুষ্ঠানস্থলে এক বেদনা বিদূর পরিবেশ বিরাজ করে।অশ্রæভরা হৃদয়ে বিদায় জানান একে একে সকলেই। সকল বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে এটাই স্পষ্ঠ করেন যে,একই জায়গায় থাকতে গিয়ে এদিক ওদিক হয়,মনোমালিন্যও হয় তবে তার পরিমাণটা যদি মাত্রাতিরিক্ত বলে আপনার কাছে কখনো মনে হয়ে থাকলে তার জন্য সত্যিই অনুশোূচনায় লজ্জিত এবৎ অনুতপ্ত। আপনার সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা,দিক-নির্দেশনা আমাদের শিক্ষকতা জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শক।

সভাপতি তাঁর সমাপনি বক্তব্যে যে বিশেষ দিকটা তুলে ধরেন তা হল-প্রায় দীর্ঘ ০২ বছর ওনার সাথে ছিলাম। সব সময় দেখতাম,ওনি কাজের মাঝে ডুবে আছেন,মনিটরিং করছেন। এছাড়া সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দিয়ে আমায় সহযোগিতা করেছেন।অন্যজনের ব্যাপার নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি বা বাড়তি চিন্তা কিংবা মাথা ঘামাতে দেখিনি।দীর্ঘ ২৫টি বছর একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নিষ্ঠার সাথে করে গেছেন যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে বিদায়ী শিক্ষকের হাতে সম্মাননা স্মারক,মানপত্র এবং কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।

প্রসঙ্গত এই বিদায়ী গুনী সম্মানিত মহান শিক্ষকের ক্যারিয়ার জীবনের কিছু কথা প্রকাশ না করলেই যেন একটা অতৃপ্তি রয়ে যায়।

জনাব অরুণ চন্দ্র দাশ ‘চারুকলা” বিষয় নিয়ে বি,এফ,এ (ব্যাচেলর অফ ফাইন্যান্স) কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন চট্টগ্রাম চারুকলা ইন্সটিটিউট,চট্টেশ^রী রোড,চট্টগ্রাম থেকে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার জীবন শুরু করেন ১৯৯২ সালে। প্রথম কর্মস্থল ছিল লক্ষীপুর আদর্শ সামাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,লক্ষীপুর,চট্টগ্রাম। উক্ত বিদ্যালয়ে প্রায় ০৩ বছর কর্মরত থাকার পর বদলি হয়ে ১৯৯৫ সালে রাঙ্গামাটি পাঃ জেলার অর্ন্তগত কাপ্তাই উপজেলার নারানগিরি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। উল্লেখ্য,মহান এই শিক্ষক অবসর গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) হিসাবে অত্র বিদ্যালয়ে দক্ষতার সহিত তাঁর কর্তব্য কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

বর্ষীয়ান এই মহান শিক্ষকের জন্মস্থান মধ্যরামপুর,হালিশহর,চট্টগ্রাম। দোভাষী বাজার,চন্দ্রঘোনা,চট্টগ্রাম এ দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি স্ত্রী,এক কন্যা,এক পুত্র নিয়ে বসবাস করে আসছেন্। পুত্র সন্তান শিক্ষাাজীবন সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করে চাকুরীর সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত এবং কন্যা সন্তান উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত।

আরো উল্লেখ্য,পরম ¤্রদ্ধেয় সহকারী প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) জনাব অরুণ চন্দ্র দাশ এর কর্মময় জীবনের কার্যদিবস সমাপ্তি ১১/০৯/২০২০ইং এবং অবসরোত্তর ছুটি(পি আর এল) শুরু আগামী ১২/০৯/২০২০ইং তারিখে।

পরিশেষে পরম গুরুজন শ্রদ্ধাভাজন মহান এই শিক্ষকের সামনের দিনগুলো যেন স্ত্রী,পুত্র,কন্যা,পরিচিতমহল সকলকে সাথে নিয়ে সুখে-স্বাচ্ছন্দে অতিবাহিত করতে পারেন এটাই প্রত্যাশা। সাথে সাথে কায়মনোবাক্যে বিধাতার কাছে এটাই মিনতি যেন তিনি এই বিদায়ী মহান শিক্ষককে দীর্ঘ আয়ূ দান করেন।