জাতির বার্তা ডেস্কঃ   

দেশব্যাপী পালিত হবে এবার অন্যরকম এক শোক দিবস । করোনা প্রকোপে এমনিতেই নিথর গোটা দেশ । তার উপর আবার দেশে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক হত্যাকান্ড ও নানা অঘটন । সারা দেশ যখন মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে শোকে স্তব্ধ । ঠিক তখনই আমাদের দোরগোড়ায় উপস্থিত ১৫ই আগষ্ট । অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবস ।
বাঙ্গালী জাতীর অন্যতম একটি শোকাবহ দিন ১৫ই আগষ্ট । এদিন আমরা হারিয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে । কতিপয় বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য, দেশী-বিদেশী ও নিজ দলের অভ্যন্তরীন কিছু সুযোগ সন্ধানী অমানুষের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান । বাঙ্গালী জাতি সেদিন হারিয়েছে তাদের মহান এক নেতাকে , হারিয়েছে তাদের স্বাধীনতার মহা নায়ককে , হারিয়েছে এক দেশপ্রেমিক রাষ্ট্র প্রধানকে । আজও এই হারানো স্বৃতি ভূলতে পারেনি বাঙ্গালী জাতি । তাই এই মহান নেতার স্বরণে প্রতিবছর ১৫ আগষ্ট পালিত হয় এই জাতীয় শোক দিবস ।
শোক দিবস আসলে কি ? বলতে গেলে এটি আমাদের জাতীয় চেতনার অন্যতম একটি অধ্যায় , কিন্তু কেন? প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের কি বার্তা দেয় ? আমরা কি আজও অর্জন করতে পেরেছি শোক দিবসের প্রকৃত শিক্ষা ?
বাস্তব সত্য হলো এই , ১৯৭৫ সালের সেই ভয়াল কালো রাত্রির পর আজ এত বছর কেটে গেলেও আমরা জানি না তার প্রকৃত ইতিহাস । আমরা ঠিক – সঠিক ভাবে আজও বলতে পারি না যে , সেদিন কাদের স্বড়যন্ত্রে নিহত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । কেন এবং কোন লোভে নিজ দলেরই কিছু স্বার্থান্বষীদের প্রত্যক্ষ মদদে তাকে হত্যা করা হয়েছিল । পরদিন সকালে কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনাটি রেডিওতে সম্প্রচার করেছিল এবং সারাদেহে কারফিউ জারি করেছিল ।
অধিকাংশ মানুষকেই এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা তেমন সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর আপনাকে দিতে পারবে না । এর চাইতে শোকের বিষয় আর কি হতে পারে ? যে জাতি নিজ ইতিহাস জানে না , তারা এই শোক দিবসের তাৎপর্য বুঝবে কি করে ? যে জাতি আত্মপরিচয় সম্পর্কে সচেতন নয়, সে জাতি কোনদিনও মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে না । দুঃখ জনক হলেও এটিই বাস্তব যে , আমরা এখনো ১৫ আগষ্ট সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানি না । ছোট থেকেই পত্র পত্রিকা , মেগাজিন অথবা পাঠ্যপুস্তক গুলোতে আমরা যে ইতিহাস পড়েছি তার বেশীর ভাগই রাজনৈতিক । এগুলোতে প্রকৃত সত্যটিকে যথার্থভাবে তুলে ধরা হয় নি । ১৫ আগষ্টের মতো একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার চেতনা নিয়ে আজও রাজনীতি করা হয় । আজও এই দিবসটি পালনে আমাদের মাঝে রাজনৈতিক বিভাজন লক্ষ করা যায় । এই বিষয়টি নিয়ে আজও আমাদের মাঝে মত পার্থক্য লক্ষ করা যায় । দল মত নির্বিশেষে এই দিবসটি উৎযাপনে আজও এক শ্রেণীর মানুষের অনীহা লক্ষ করা যায় । এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে ? ঃঃ
বঙ্গবন্ধু একজন দেশপ্রেমিকই শুধু ছিলেন না । তিনি ছিলেন একজন সৎ , সাহসী ও ন্যায় নীতি পরায়ণ মানুষ । অন্যায়কে তিনি সহ্য করতে পারতেন না । অন্যায় ও অসততার প্রতি আপোষহীন মনোভাবই ছিল বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার অন্যতম কারণ । প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দলালের দল তাকে সহ্য করতে পারতো না বলেই অত্যন্ত নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছিল তাকে । আজ মেজর সিনহাকে যারা হত্যা করেছে, ঠিক তাদের মতোই একটি বাহীনির কিছু সদস্যের হাতে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আজ ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে । কিন্তু আজও বাংলার মাটি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি মেজর ডালিম ও খন্দকার মুশতাকের দল । প্রদীপ – লিয়াকতের নাম ধারন করে আজও তারা আমার বাংলার মানুষকে হত্যা করছে । আজও অসংখ্য মায়ের বুক খালি হচ্ছে । আজও অত্যাচারিত মানুষের আর্তনাদে – বাংলার আকাশ ভারী হচ্ছে । আজও ডালিম-মুশতাক-প্রদীপ-লিয়াকতের হাতে মানুষ জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ।
আসুন , আজকের শোক দিবসে উজ্জীবিত হই জাতীয় মুক্তির চেতনায় । ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র মিলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে , প্রদীপ-লিয়াকত’দের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলি ।