দেশের উত্তরের জনপদ লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় চা চাষে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন এক দিগন্তের সূচনা সৃষ্টি করেছে । তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও ক্লান্তি দূর করার এক অনন্য পানীয় হচ্ছে চা। ইতিমধ্যে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে , উত্তর বঙ্গের জেলা পঞ্চগড় , ঠাকুরগাঁ, লালমনিরহাট ও নীলফামারি।একসময়ের পতিত গোচারণভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় পরিপূর্ণ।
স্বাদে ও গন্ধে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চা চাষ হয় ভারতের দার্জিলিং এ আর সেখান থেকে পঞ্চগড়ের দূরুত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটা। অপর দিকে সীমান্তের এপাশে কৃষকের জমি পরিত্যাক্ত থাকতো বছরের পর বছর। পতিত জমি ব্যবহার হত গোচারণভূমি হিসাবে। মাটির ধরনের কারণে এই এলাকার জমিতে নিয়মিত ফসল হতো না, কৃষকদের গুনতে হত লোকসান। একসময় ফসল চাষে আগ্রহ হারিয়েফেলেছিলেন তারা। দার্জিলিং এর সাথে মাটির গুণাগুন ও আবহাওয়া প্রায় একই হওয়ায়, বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৯ সালে পঞ্চগড় ও তার আশেপাশের এলাকায় চা চাষের জন্যে জরিপ চালায় এবং তাদের সহযোগিতায় তেতুলিয়ায় ২০০১ সালে ৬-৭ জন ক্ষুদ্রচাষি চা চাষ শুরু করে, তেতুলিয়ায় চা চাষে সফলতা আসায়, তাদের পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ীরাও চা চাষ শুরুকরে, এভাবেই ধীরে ধীরে চুপিচুপি পঞ্চগড়ে ঘটে চা চাষের বিপ্লব। মাত্র কয়েক বছরেই পতিত গোচারণভূমি চায়ের সবুজপাতায় ভরে যায়।
গম, ভূট্টা, বাদাম চাষের চেয়ে চা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা চা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এখন বাড়ীর আশেপাশে পতিত জমিতেও চাষিরা চা চাষ করছেন। চাষিরা জানান চা পাতা বিক্রি করাও সহজ, কোন ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় না। কারখানার মালিকেরা নগদ টাকা দিয়ে পাতা নিয়ে যায়।
এখন প্রায় ১০-১২ হাজার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই চা বাগানে। কয়েক বছর আগে যে নারীরা ঘরে বসে অলস সময় কাটাতেন তারা এখন চা শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে আয় করছে। পারিবারিক, সন্তানের পড়াশুনার খরচ বহন করছে। যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছ,বেকারত্ব কমছে। জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুন।
স্থানীয় শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায় তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পূর্বে সারা দিন কাজ করে পেত ২৫০-৩০০ টাকা, এখন চা পাতা সংগ্রহের কাজ করে পায় ৪০০-৫০০ টাকা।
চা বাগানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়াও সমতল ভূমির চা বাগান দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে পর্যটকরা। চা চাষে পরিবর্তন হয়েছে উত্তরবঙ্গের চাষিরদের জীবন ও জীবনযাত্রার মান,সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের।
পঞ্চগড়, লালমনিরহাটের চা এখন দেশেও গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকা, জাপান, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে। চা বোর্ড বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে ভিশন ২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে চা উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নতি করা হবে, তার জন্য সরকার ৭৬১ কোটি টাকা ব্যয় করছে।
তবে স্থানীয় চাষিদের দাবি তাদেরকে যদি প্রয়োজনীয় কীটনাশক,সারসহ কৃষি উপকরণ গুলো সহজ শর্তে দেওয়া হয় তাহলে চা চাষের পরিধি অনেক বাড়বে।
