করোনা মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষনা করা হয় বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো । এরপর দেশজুড়ে পালিত হয় কয়েক দফা লকডাউন । সরকারী – আধা সরকারী, বেসরকারী  ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে সবকিছুই ফিরে গেছে স্বাভাবিকতায় । দেশে এখন কোন প্রকার লকডাউন না থাকলেও বন্ধ রয়েছে দেশের সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো । দেশে করোনা মহামারী মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কোন নাম গন্ধ নেই ।  উল্টো দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি । কবে নাগাদ এগুলো খুলে দেয়া হবে  , তারও কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই ।
 এদিকে দীর্ঘদিন টানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা । অনুষ্ঠিত হয়নি এ বছরের এইচএসসি । বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বাড়ছে সেশন জট । শিক্ষার্থীদের মাঝে নেমে এসেছে ভয়াবহ হতাশা । সব মিলিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে এক মহা হযবরল ! এ সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ ।
করোনা মহামারী কবে ঠিক স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আগামী কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে এই মহামারী । অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে , সহসাই সবকিছু অনুকূলে আসবে না ।  অথচ প্রতিকূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ছুটি । প্রশ্ন হচ্ছে , এভাবে আর কতদিন চলবে ?  প্রতিকূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে অনির্দিষ্ট কাল বসে থাকা কতটুকু যৌক্তিক ?
খুব স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে , করোনা মহামারীর মাঝেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে এসেছে ভয়াবহ আরেক মহা দুর্যোগ । সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তব সম্মত উপায়ে এটি মোকাবিলা করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে । অন্যথায় এর পরিণতি হতে পারে মারাত্মক । একদিকে আটকে আছে এ বছরের এইচএসসি । অন্যদিকে পিইসি ও জুনিয়র সমাপনী বাতিল করা হয়েছে । আবার সামনে অপেক্ষারত আছে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ।
 অনেক বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই অটো প্রমোশন ও দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । বাংলাদেশের প্রবীণ শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ইতোমধ্যেই এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । একটু বিলম্ব হলেও এই পরীক্ষা গুলো নেয়া জরুরী । তাদের মতে ,স্কুল- কলেজে  কোন পরীক্ষা না নিয়ে অটো প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতি । এটি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কোন গ্ৰহন যোগ্য পদ্ধতি হতে পারে না । এতে করে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যপক অব্যবস্থাপনা দেখা দিতে পারে ।
 মনে করুন ,যে সকল শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে পড়ে । তাদের অটো প্রমোশনের মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা হলো । অপরদিকে যারা বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে তাদের আগামী বছরের এইচএসসি  অনিশ্চিত । কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস বন্ধ । আবার এ বছরের এইচএসসি এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি , তাদের পরীক্ষা কবে নেয়া হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই । একটু ভাবলেই বোঝা যায় যে , দ্বাদশ শ্রেণীতে একই সাথে তিনটি ব্যাচ অবস্থান করবে । এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন কলেজেরই সক্ষমতা নেই তিনটি ব্যাচ একই সাথে একই শ্রেণীতে ক্লাস করানোর । এতে অবকাঠামোগত ও শিক্ষক সংকটে পরতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ।
তাছাড়া বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ স্থবিরতা । স্কুল- কলেজে অটো প্রমোশন দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি সম্ভব হচ্ছে না । বিকল্প হিসেবে অনলাইন ক্লাসের কথা বলা হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না । এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে সেই কবে , অথচ সবেমাত্র  ডিভাইস ও স্বল্প মূল্যে ইন্টারনেট ডাটা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার । বিষয়টি অবশ্যই দুঃখ জনক । তাছাড়া বাংলাদেশে হুট করেই অনলাইন ক্লাস এতোটা সহজ নয় , যেভাবে তা প্রচার করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে । পাশাপাশি সেশনজট নিরসনে এখন থেকেই কাজ করতে হবে ।
করোনা মহামারী কবে নিয়ন্ত্রনে আসবে তার জন্য  বসে থাকার আর সুযোগ নেই । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বর্তমান স্থবিরতা নিরসনে অবিলম্বে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে । যতো দ্রুত সম্ভব সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত । এক্ষেত্রে শিক্ষক- শিক্ষার্থী  উভয়েরই আওয়াজ তোলা উচিত
মোঃ আরাফাত রহমান
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়