মোঃ আলী সোহেল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ৪৩নং দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিতর্কিত ও সাময়িক ভাবে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়া পূনরায় ওই বিদ্যালয়ে যোগদান প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে এলাকাবাসী।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১ ঘটিকার সময় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোস্তাক ও স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. কামরুল হাসান এর নেতৃত্বে বিদ্যালয় মাঠে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মো. মোহর উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সাময়িক ভাবে বরখাস্তকৃত ও বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়ার পূনরায় ওই বিদ্যালয়ে যোগদান প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোস্তাক, বিদ্যালয়ের পিটিআই কমিটির সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রোমান মিয়া, আশিকুর রহমান অন্তর, অভিভাবক সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ও নাহিদুল হাসান প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, বিতর্কিত সেলিম মাষ্টার ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে বিদায় দিয়ে বিকেলে ৫ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পুরাতন বই পালটিয়ে নতুন বই দেওয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের দু’তলায় নিয়ে যৌন হয়রানি করে। এ ঘটনা বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থী দেখে ফেলায় বিষয়টি গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠে। বিষয়টি পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আপোষ মিমাংসা হয়। সর্বশেষ গত ২০২০ সালের ৯ জুন সকালে উপজেলার পূর্ব আব্দুল্লাপুরস্থ তার নিজ বাড়িতে একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ানোর সময় দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রী (১২) কে কৌশলে একা কোচিং সেন্টারে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে।এঘটনায় সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হওয়ার প্রায় ২ বছর পর সেলিম মাষ্টার মামলার বাদীর সাথে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করে পুনরায় এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে চাচ্ছে। আর এ সংবাদ দড়িগাঁও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী সম্মেলিত ভাবে বিতর্কিত সেলিম মাষ্টারকে দড়িগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি করে বলেন, সেলিম মাষ্টার মামলা শেষ করে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে থাকলে সে অন্য যেকোন বিদ্যালয়ে গিয়ে যোগদান করুক, দড়িগাঁও বিদ্যালয়ে কেন? বিতর্কিত এ মাষ্টার যাতে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করতে না পারে এর জন্য উর্ধোতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তারা আরো বলেন, লম্পট সেলিম মাস্টার এই বিদ্যালয়ে পূনরায় যোগদান করতে আসলে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। কেননা সে তার স্কুল ছাত্রীদের একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়ে এলাকার এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটনার মিমাংসা করতে পেরে প্রতিবার পার পেয়ে যাচ্ছে। সে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারলে আবারো কোমলমতি ছাত্রীরা তার যৌন লালসার শিকার হতে পারে এমন আশংকা থাকায় তাকে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দেওয়া হবেনা। আমরা এর প্রতিরোধ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এবং প্রতিবারই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী সালিশিয়ানদের ম্যানেজ করে এবং তাদের সহযোগিতায় সেসব যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে সে।
এ ব্যাপারে সেলিম মাষ্টারের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কতৃপক্ষ আমাকে যেখানে দেয় সেখানেই যেতে হবে। তবে দড়িগাঁও সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।