খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভীর।
মোঃ আরিফুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি)
অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি পাহাড় পর্বত ঘেরাও বৈচিত্র্যময় নৈস্বর্গিক খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় তিনটি পর্যটন কেন্দ্র রিছাং ঝর্না,আলুটিলা গুহাসহ খাগড়াছড়ি জেলা পার্বত্য পরিষদ হর্টিকালচার পার্কে বা ঝুলন্ত ব্রিজে পর্যটকদের ভীর।
আলুটিলা পর্যটন স্পট থেকে প্রায় ৩কিঃ মিঃ পশ্চিমে (খাগড়াছড়ি থেকে ১১কিঃমিঃ) খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়ক হতে বাম পার্শ্বে ১কিঃ মিঃ দক্ষিণে গেলেই রিছাং ঝর্ণা।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ঢাকা-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি মূল সড়কের পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত রিসাংঝর্নার শিরশির ছন্দে হিম শীতল বহমান স্বচ্ছ পানির আওয়াজ পর্যটকদের মন আকর্ষণ করে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত রিসাং ঝর্না । মূল সড়ক থেকে নেমে খানিকটা উত্তরে গেলেই শোনা যায় ঝর্নার পানির শব্দ।
ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চ কর ।যাত্রাপথে দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়,বুনোঝোঁপ,নামহীন রঙ্গীন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায় । ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ মন ভরে উঠে । ২৫-৩০ হাত উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি, ঢালুপাহাড় গড়িয়ে নীচে নেমে যাচ্ছে এই প্রবাহ।
কাছাকাছি দুটো ঝর্ণা রয়েছে এ স্থানে, প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এখানে এসে ভীড় জমান এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে গাভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্মহন। মারমা ভাষায় এর নাম রিছাং ঝর্ণা, ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। মূল সড়ক হতে রিছাং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে চারিদিকের পাহাড়ী প্রকৃতি মনের মাঝে এক অনুপম অনুভূতির সৃষ্টি করে। ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দিই সারাক্ষণ। ঝর্ণা ছেড়ে মন চায়না ফিরে আসতে কোলাহল মূখর জনারণ্যে ।
খাগড়াছড়ি জেলা শহর এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ থেকে রিসাং ঝর্নার এই স্থানটির দূরত্ব মাত্র ১১ ও ১০ কিলোমিটার । তবে একেবারে ঝর্নার উত্ সমুখে যাওয়ার জন্য স্রেফ গাড়িতে বসে থাকলে চলবে না। বরংঅল্প বিস্তর পথ পায়ে হেঁটেও চলতে হবে । রিসাং ঝর্নায় যেতে চাইলে খাগড়াছড়ি শহর কিংবা মাটিরাঙ্গা থেকে সকাল, সকাল,মোটরসাইকেল, বাস বা চাঁদের গাড়িতে চড়ে বেরিয়ে পড়াই ভালো ।
ঢাকার দিককার রাস্তায় দশ কিলোমিটার পথ এভাবে এসে আলুটিলার গুহা পার হলেই মূল রাস্তা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে রিসাং ঝর্ণা। রিসাং ঝর্নার সৌন্দর্যের পাশাপাশি পাহাড়ি পথে দুই কিলোমিটার হাঁটা টাও কম মোহনীয় নয়। তাই একদিকে সবুজ পাহাড়ও পাহাড়ী মানুষের জীবন ধারা আর অন্যদিকে হাজার ফুট নিচের উপত্যকার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই পথ টুকু খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় । রিসাং এর মূল প্রাকৃতিক ঝর্নাটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ।
আর এক বার জলের ধারা নিচে পড়ার পর তা আর ও প্রায় ১০০ ফুট পাথরেরও পর গড়িয়ে নেমে এসেছে সমতলে । মূলত ঝর্নাটির বিশেষ এই বৈশিষ্ট্যটির কারণেই অনেকে ঢালু এই পথে পিছল খেয়ে পড়ার মতো করে প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং করতে ভালোবাসেন । যদিও পাথুরে স্লাইড বলে পিছল খেয়ে নামার জন্য মোটা কাপড় বা ছালার মতো কোনো সামগ্রী ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ । এ ছাড়া রিসাং ঝর্নার পাদদেশে যেখান থেকে ঝর্নার পানি সমতলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে সেখানে চাইলে সাঁতার কাটা বা গোসল করার সুবিধাও আছে।
আলুটিলা গুহা
#মাটিরাঙ্গা থেকে ১১ কিলোমিটার জেলা শহর পথে। অথবা জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলার অবস্থান
অপরূপ বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি পার্বত্য খাগড়াখড়ি জেলা। এ নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর পর্যটন সম্ভাবনাময় ও পাহাড়ের রাণী খ্যাত পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটন স্পট আলুটিলা। পাহাড়বাসীর কাছে যেমনি পরিচিত তেমনি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে শতবছরের বটমূল ও আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, রহস্যময় গুহার কারণে ‘আলুটিলা’ খুবই পরিচিতি।
খাগড়াছড়ি শহর হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত বলে পর্যটকরা একে আলুটিলা গুহা বলেই চিনি। এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। তাই সারা বছরই এখানে ভীড় লেগে থাকে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, যা হৃদয় ছুয়ে যায়। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চাইতে উচু পর্বত।
নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেণি। আলুটিলার পূর্বের নাম ছিল আরবারী পর্বত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ৩০০০ ফুট। আকাশ, পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করে।
আলুটিলা রহস্যময় সুগঙ্গে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কেঁটে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। ফটকের দুই পাশে দুটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ আছে যা আপনাকে স্বাগত জানাবে। গুহার ভিতর সূর্যের আলো যেতে পারেনা তাই যাবার পূবে অবশ্যই মশাল নিয়ে যেতে হবে।
এই সুউচ্চ পর্বতের সর্পিল আকারে আঁকা বাঁকা রাস্তার দু’ধারে সবুজ বনাঞ্চল সারি সারি উঁচু নিচু পাহাড় আর লুকিয়ে থাকা মেঘ আপনার মনকে চুরি করবে। রাস্তা দিয়ে মিনিট খানে হাঁটলেই চোখে পড়বে একটি সরু পাহাড়িপথ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে গেছ এই পথটি। এই পথটি বেয়ে নিচে নামলেই চোখে পড়বে একটি ছোট ঝর্না।
ঝর্নার পানি নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে ঝিরি বরাবর। তবে এখানে পাহাড়ী লোকজন ঝর্নার পানি আটকে রাখার জন্য একটি বাঁধ দিয়েছে। তারা এই পানি খাবার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে।
পাকা রাস্তা শেষ হলে আপনাকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্খিত সেই আলুটিলা গুহা। আলুটিলা গুহাতে যাবার জন্য আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে।
কিন্তু এখন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহা মুখে। এটি একেবারেই পাথুরে গুহা, তাই খুব সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়। কারণ সুরঙ্গের ভিতরে কোন আলো নেই। সুরঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝর্না প্রবাহমান। তাই খুব সাবধানে মশাল বা আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে।
পা ফসকে গেলেই আহত হতে হবে। তবে অন্য কোন ভয় নেই। গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। আলুটিলার এই মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা সত্যিই প্রকৃতির একটি আশ্চর্য খেয়াল। দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মত যার দৈর্ঘ প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহার ভীতরে জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে প্রায় ১৫ মিনিট।
#নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি ঝুলন্ত ব্রীজ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে জিরোমাইল এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক।
দু’টি পাহাড়কে একটি ঝুলন্ত ব্রিজের মাধ্যমে সংযুক্ত করে ২২ একর জায়গা জুড়ে ২০১১ সালে এ পার্কটি স্থাপিত হয়েছে।
পার্কটির পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে হ্রদ। সেখানে নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রবেশমূল্য মাত্র ৪০ টাকা।
এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গাছগাছালি ছাড়াও জেলা পরিষদের উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে এখানে বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ লাগানো হয়েছে।
এ পার্কে দেখতে পাবেন প্রচুর আম, শুপারি, নারকেল, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, জলপাই, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রকার ফলদ গাছ।
পার্কটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ঝুলন্ত ব্রিজ। ৪ ফুট চওড়া ও প্রায় ২৫০ ফুট লম্বা ব্রিজটিতে রয়েছে নাইলনের নেটের রেলিং। ফলে চলাচলের সময় ব্রিজটি ঝুললেও পর্যটকদের পড়ে যাওয়ার ভয় নেই।
শহরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। প্রায়ই পার্কটিতে বিভিন্ন নাটক ও শর্ট ফিল্মের শুটিং হয়।
ঝুলন্ত ব্রিজ পার হয়ে দ্বিতীয় পাহাড়ে গেলে সেখানে রয়েছে একটি কিডস কর্নার ও একটি ট্রেন।
পার্কটি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্কটিতে রয়েছে একাধিক কটেজ, গোলঘর ও পিকনিক কর্নার।