‘পাহাড়ী কৃষি গবেষনা কেন্দ্র,রাইখালী’প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—ফল,সবজি তথা ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন,আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল এবং প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে গবেষনা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট এর গবেষনা কেন্দ্র মোট ০৩ টি যা রামগড়,খাগড়াছড়ি(২টি) ও রাঙ্গামাটি র্পাবত্য জেলা(১)’র কাপ্তাই উপজেলার ‘‘পাহাড়ী কৃষি গবেষনা কেন্দ্র,রাইখালী।’’
“পাহাড়ী কৃষি গবেষনা কেন্দ্র,রাইখালী” মূলত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি নীচু পাহাড় ও উপত্যকা সমন্বয়ে গঠিত যার দরুন বহুবর্ষী ফসল ও লেবু জাতীয় ফসল ভাল হয়। এছাড়া এ গবেষেনা কেন্দ্রটির ভূমির বৈশিষ্ট্য হলো-উপত্যকার ভূমি পিডমন্ড উর্ব্র মৃত্তিকাসমৃদ্ধ,যেখানে দানাশস্য ও নানান উদ্যানভিত্তিক ফসল ভাল জন্মে। এই গবেষনা কেন্দ্রের মাটির আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো: মধ্যম বুনটের(দোঁ-আশ) হতে সুক্ষ্ন বুনটের(বেলে,র্ক্দম ও দোঁ-আশ)। জৈব পদার্থের পরিমাণ কম।
অত্র গবেষনা কেন্দ্রটিতে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্ম্কর্তা হিসাবে দায়িত্বে আছেন জনাব ডঃ মো: আলতাফ হোসেন। যিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে ২১/১১/২০১৬ইং সালে যোগদান করেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান,অত্র কেন্দ্রটিতে শ্রমিক সংকট রয়েছে।যেখানে ৭৬ জন শ্রমিক প্রয়োজন সেখানে ২৯ জন স্থায়ী ও ১৫জন অস্থায়ী সব মিলিয়ে মোট ৪৪ জন শ্রমিক কাজে নিয়োজিত।বাদবাকী শ্রমিক সংকট বিদ্যমান।
স্বায়ত্বশাসিত এ গবেষনা কেন্দ্রটিতে রয়েছে জামে মসজিদ,কর্ম্কর্তা-কর্ম্চারীদের আ/এ, চর্তুথ শ্রেণীর র্কম্চারীদের আ/এ, আরো আছে কিন্ডার গার্টেন স্কুল এবং অতিথিশালা। মূলতঃ কৃষি গবেষনা সংশ্লিষ্ট যারা এ কেন্দ্রে আসেন তাঁরাই অতিথিশালায়(রেস্ট হাউজ) থাকার সুযোগ পান।
“পাহাড়ী কৃষি গবেষনা কেন্দ্র,রাইখালী” গবেষনার মাধ্যমে আধুনিক বীজের জাত উৎপাদনে সফল হওয়ার পর বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে কৃষিমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে তা নিবন্ধিত/রেজিষ্টারভূক্ত হয়।এক কথায় যাকে বলা হয,উদ্ভাবিত জাতটি জাতীয় বীজ র্বোড কর্তৃক নিবন্ধিত (উন্নত জাতটির আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল অবমুক্তি)।
উল্লেখ্য এ পর্য্ন্তএই কেন্দ্র হতে গবেষনার মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে জাতীয় বীজ র্বোড কর্তৃক নিবন্ধিত অর্থাৎ মুক্তায়িত হয়েছে মোট ১৯ টি। যার মধ্যে ফলের ১০ টি এবং সবজির ০৯ টি। নিম্নে তালিকাকারে তা দেওয়া হলো->>>>
২০০২ সালে নিবন্ধিত—à বারি ঝারশিম-২
২০০৪ সালে নিবন্ধিত—à বারি কলা-৩
২০০৫ সালে নিবন্ধিত—à বারি কলা-৪
২০০৬ সালে নিবন্ধিত—à বারি শিম-৪
২০০৮ সালে নিবন্ধিত—à বারি কামরাঙ্গা-২
২০১০ সালে নিবন্ধিত—à বারি আম-৮
২০১১ সালে নিবন্ধিত—à বারি ঝারশিম-৩(খাইস্যা)
২০১১ সালে নিবন্ধিত—à বারি জ্যাকবীন-১
২০১১সালে নিবন্ধিত—à বারি সীতালাউ-১
২০১২ সালে নিবন্ধিত—à বারি মিষ্টিলেবু-১
২০১৩ সালে নিবন্ধিত—à বারি কুল-৪
২০১৪ সালে নিবন্ধিত—à বারি ড্রাগন ফল-১
২০১৪ সালে নিবন্ধিত—à বারি জলপাই-১
২০১৫ সালে নিবন্ধিত—à বারি ব্রোকলি-১
২০১৫ সালে নিবন্ধিত—à বারি চিনাল-১
২০১৭ সালে নিবন্ধিত—à বারি পেয়ারা-৪ (বীজবিহীন)
২০১৭ সালে নিবন্ধিত—à বারি শিম-৯ (খাইস্যা)
২০১৭ সালে নিবন্ধিত—à বারি শিম-১০ (খাইস্যা)
সম্প্রতি ২০২০ সালে উদ্ভাবিত এবং নিবন্ধিত ফল— à“বারি জাম“। এই বারি জাম মুক্তায়িত এবং নিবন্ধিত হয়েছে বিধায় তা ব্যাপক চাষাবাদের আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি উদ্ভাবিত বারি জাম এর বৈশিষ্ট্য হলো—
এই বীজের ওজন কমএবং উচ্চ ফলনশীল,৮৩% ভক্ষনযোগ্য,প্রতিটির গড় ওজন ১০ গ্রাম,১টি ৬ বছর বযসী বারি জামএর মাসিক গড় উৎপাদন ৬০ কেজি, এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত যা টি,এস,এস এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখার পর ফলাফল হল: এর স্বাদ ১২.৪ অর্থাৎ ২০ এর কম।৬ বছর বয়সী বারি জাম প্রতি বছরে ৭ হাজার ফল উৎপাদনে সক্ষম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,এ কেন্দ্র/প্রতিষ্ঠানটির বিশেষত্ব হলঃ র্পাবত্য অঞ্চলের কৃষকের মাঠের বিভিন্ন ফসলের চিহ্নিত সমস্যার সমাধান,জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সেবা প্রদান।এছাড়াও এ গবেষনা কেন্দ্রটি থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অত্র এলাকার জুমিয়া,কৃষক,উপসহকারী কৃষি র্কম্কর্তা, কৃষি র্কম্কর্তা,কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট এন,জি,ও এবং কর্ম্কর্তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়ে থাকে।এ কেন্দ্রে আছে আবাসিক সুবিধাসহ দুইটি প্রশিক্ষণ ভবন যেখান হতে সারা বছর সব ধরনের কৃষির উপর প্রশিক্ষণ,সেমিনার,সিম্পোজিয়ামও কর্ম্শালা চলতে থাকবে।
‘‘পাহাড়ী গবেষেনা কেন্দ্র,রাইখালী’’তে গবেষনায় উদ্ভাবিত বীজ হতে একবার কাঙ্খিত ফল পাওয়ার পর ২য় বারে আর উৎপাদনে যান না। গাছে ফুল এলেই তা কেটে ফেলে দেওয়া হয় যেন ফল উৎপাদন না হয়।এর মূল লক্ষ্য হল-ফল উৎপাদন নয়,মাতৃগাছ বাগান তৈরী করাই মূখ্য কাজ। তবে উদ্ভাবিত উন্নত বীজ রেখে দেওয়া হয় (উৎপাদন/ফলন ছাড়া) যেন পরবর্তীতে যে বীজটি উদ্ভাবিত হবে তার সাথে ব্যবধান/র্পাথ্ক্য/তুলনা করা যায়।
এখানে লক্ষ্যনীয়, গবেষনা কেন্দ্রটির প্রায় ১৫০ মিটার জায়গা ছড়া/খালে ভাঙ্গন কবলিত।এ ভাঙ্গনরোধে কার্যাদি সম্পন্নের জন্য ২০০৭ সালে তখনকার প্রধান বেজ্ঞানিক র্কম্কর্তা জনাব জুলফিকার আলী ফিরোজ মহোদয় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন।অতীব দুঃখের বিষয় ক’দিন পরেই পুনরায় তা ভেঙ্গে যায়।এজন্য পরবর্তীতে ভাঙ্গনরোধে আর কোন কাজ করা হয়নি।স্বল্পব্যয়ে এ ভাঙ্গন রোধ সম্ভবপর নয়। এ প্রতিবেদককে প্রধান বেজ্ঞানিক র্কম্কর্তা বলেন,‘‘এখানে আবশ্যক বৃহদাকার প্রকল্প। তবেই হয়তো ভাঙ্গন রোধ সম্ভবপর।’’
গবেষনা কেন্দ্রটি প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের গবেষনার জন্য সৃষ্ট ফুল,ফল ও সবজির অপরিমেয় র্সৌন্দয্য পর্যটকদের সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়।তাই পর্যটকদের অগাধ বিচরণ। স্থানীয় জনগণ থেকে শুরু করে দূর-দূরান্ত থেকে র্পযটকরা আসেন এ কেন্দ্রটির সৌর্ন্দয অবলোকন করতে।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপ চারিতায় প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কম্কর্তা জনাব ডঃ মোঃ আলতাফ হোসেন জানান,“গবেষনা কেন্দ্রটিতে সীমানা প্রাচীর না থাকায় চারিদিক থেকে মানুষ চলাচল করে।একদিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়।এছাড়া নানান পশু ভিতরে প্রবেশ করে বীজ ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করে।যার দরুন গবেষনার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।ফল-ফলাদি,গাছপালা চুরি হচ্ছে।ঘেরাও দিয়ে যতটা সম্ভব রক্ষনাবেক্ষনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা সত্বেও ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো দুরুহ হয়ে পড়েছে।তাই এ গবেষনা কেন্দ্রটি জনসাধারণ এবং ভ্রমনপিপাসুদের জন্য উন্মূক্ত না করে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষনা করা গেলে তবেই সব কিছুর সুরক্ষা হত।এমতাবস্থায় সীমানা প্রাচীর অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।এছাড়াও শ্রমিক সংকট দূরীভূত করা গেলে অত্র গবেষনা কেন্দ্রটি তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।”তিনি আরো বলেন,“আমি এ গবেষনা কেন্দ্রে যোগদান করার পর গবেষনা কাজের সম্প্রসারনের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন নয়,নতুন নতুন আধুনিক জাতের বীজ উদ্ভাবনে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”
পরিশেষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট এর অধীন “পাহাড়ী কৃষি গবেষনা কেন্দ্র,রাইখালী” তাঁদের গবেষনার কাজ আরো ব্যাপকও সম্প্রসারনের মাধ্যমে ফল ও সবজির আরো নতুন নতুন জাত উদ্ভাবিত করে তা অবমুক্ত করুক এটাই প্রত্যাশা।