গাজীপুর প্রতিনিধিঃ 

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী সংকট মোকাবেলা করে এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

গাজীপুর, ১৯ আগস্ট ২০২০ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), গাজীপুর এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে অদ্য বিকেল ৪:৩০টায় “করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা; বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের করণীয়’’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মো: রাশিদুজ্জামান (লিটন) এর সঞ্চালনায় এবং সনাক সভাপতি অধ্যাপক মো: শহীদ উল্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ ভার্চুয়াল সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মোফাজ্জল হোসেন, সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ খান, সনাক, স্বজন সদস্যবৃন্দ, টিআইবি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় পর্যায়ের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ যুক্ত ছিলেন।

সনাক আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় বক্তাগণ উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী সংকট মোকাবেলা করে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার নির্দেশিত ম্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে প্রান্তিক ও দুর্বল শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সভায় অংশগ্রহণকারী বাংলাভিশন চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি মীর মো: ফারুক এবং দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার প্রতিনিধি অনীল কুমার মন্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডার গার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকগণের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি অনুরোধ জানান। কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমপরিমাণ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন ও বেসরকারি পর্যায়ের বিদ্যালয়েও পড়াশুনা করছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। সভায় উপস্থিত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব মো: মোফাজ্জল হোসেন তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, এই সংকটময় সময়ে সনাক এবং টিআইবি’র মতো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত এ ধরনের কর্মসূচি এবং তাদের প্রদত্ত সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ করোনাকালীন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে বিদ্যমান সমস্যা নিরুপনে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে চলমান এই অচলবস্থার মধ্যেও জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের সুনিবিঢ় তদারকির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘‘গাজীপুর জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৯৮%শিক্ষার্থীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে; তবে এসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই সমাজের প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বাসিন্দা। যাদের অনেকের কাছে ডিজিটাল টেকনোলজির সুবিধা এখনো তেমনভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠেনি। তাই সরকার সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়া, ‘‘অনলাইন প্রাইমারি স্কুল’’ নামে কিছু কিছু এ্যাপস আপলোড করা হচ্ছে, এফএম রেডিওতে পাঠদান কর্মসূচি চালু হচ্ছে, যার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকছে। তবে এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোনের যোগাযোগটি সবচেয়ে কার্যকর বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাছাড়া, করোনাকালিন ক্ষতি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে লেসন রিকভারি প্ল্যান করা হচ্ছে এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে বছরব্যাপী ভর্তি হওয়ার সুযোগ রাখার পাশাপাশি উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও তিনি সভায় অবহিত করেন। টিআইবি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: হুমায়ুন কবীর তার বক্তব্যে চলমান করোনা সংকটময় মূহুর্তেও গাজীুপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রায় ৯৮% শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাকে একটি চমৎকার অর্জন বলে মন্তব্য করেন এবং এ অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সংসদ টিভির পরিবর্তে/পাশাপাশি বিটিভিতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় কি-না তা ভেবে দেখার জন্য শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। কারণ সুবিশাল প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামীণ বা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, ফলে তাদের অনেকের পক্ষেই ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংসদ টিভি দেখা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। ফলে সংসদ টিভির শিক্ষা কার্যক্রম সকলের কাছে পৌছানো সম্ভব হয় না।
সনাক সভাপতি অধ্যাপক মো: শহীদ উল্যা বলেন-বর্তমানে আমরা একটি চরম দুর্যোগময় সময় অতিক্রম করছি এবং আমাদের দেশের প্রায় সকল সেক্টরের মতো শিক্ষা সেক্টরেও অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরপরেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে; সরকার নির্দেশিত ম্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে, বাড়ীতে শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী থাকে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকে সে লক্ষ্যে করোনকালিন সময়েও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। জাতির প্রতিটি সংকটময় মূহূর্তে ও প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষকসমাজের ভুমিকা ছিল খুবই গুরুত্পূর্ণ এবং বর্তমান সময়ে চলমান এই করোনা সংকটেও তারা তাদের সেই ভুমিকা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য মুকুল কুমার মল্ল্কি, ফয়জুন্নেছা লাভলী, মো: ফজলে নিজামী, সোলায়মান হোসেন খানসহ প্রমূখ।