গাজীপুর প্রতিনিধিঃ ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাষ্টারবাড়ি থেকে রাজেন্দ্রপুর এলাকা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের এই অংশে গাড়িচালক ও যাত্রীরা চরম আতঙ্কে থাকেন। ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা প্রায়ই সড়কটির দুই পাশে শালবনে অবস্থান নিয়ে কৌশলে পাথর, পাইপ, লোহা ও ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল ছুড়ে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ডাকাতি করে থাকে। বাধা দিলে হামলাসহ খুন জখমের ঘটনাও ঘটেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, গত এক বছরে এই এলাকা থেকে অন্তত ৬০ জন ডাকাতকে আটক করেছেন তারা। ডাকাতি রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৮ কিলোমিটার এলাকা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গহীন বনের ভেতরে অবস্থিত। সড়কটিতে ল্যাম্প পোষ্ট থাকলেও রহস্যজনক কারণে জ্বলেনা বাতি। অনেক স্থানে ল্যাম্পপোষ্ট পড়ে গেছে, রয়েছে তার ছেড়া। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও এখন এগুলোর কোনটিরই অস্তিত্ব নেই। ফলে সন্ধ্যার পরই মহাসড়কটির এই অংশ ভুতড়ে সড়কে পরিণত হয়। ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা প্রায়ই সড়কটির দুই পাশে শালবনে অবস্থান নিয়ে কৌশলে গাড়িতে পাথর, পাইপ, লোহা ও ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল ছুড়ে। এসময় যানবাহন থামানো হলে অস্ত্রের মুখে চলে ডাকাতি। বাঁধা দিলে রক্তাক্ত জখমসহ ঘটে প্রাণ হানি। চক্রটি প্রায়ই মোটর সাইকেল ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে গহীন জঙ্গলে পালিয়ে যান।
এই এলাকা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা ‘ঢিল ছোড়া পার্টি’ হিসেবে পরিচিত ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রগুলোর কাছে তাদের জিম্মি হওয়ার কথা জানিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, গত দুই মাসে অন্তত ২০টি ডাকাতি এই এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। এজন্য তারা সড়কে নিরাপত্তা জোরদার, বাতি স্থাপন ও সিসিটিভি লাগানোর দাবি করছেন।
ঢিল ছোড়া পার্টি চক্রের সদস্যদের অপতৎপরতার কথা স্বীকার করে র্যাব-১ এর গাজীপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আবদুল্লাহ্ আল মামুন জানান, গত এক বছরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে ৬০জন ডাকাত ও ৮ জন হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র। এ ছাড়া টহলে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে সংঘবদ্ধ ডাকাতরা পুলিশ কনস্টেবল শরীফ, সোর্স সাগরসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে তাদের সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছিল। এছাড়া এখানে হামলা ও আহতের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। ইতোমধ্যে র্যাবে সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন দুই ডাকাত। জরুরী ভিত্তিতে এই এলাকায় সড়ক বাতি জ্ববালানোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিরাপত্তা জোরদারের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।