বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল টপ টেন শো রুমে হামলা মামলার ২১ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সোহান তার ইন্টারনেট ব্যবসার কর্মচারী আল আমিনকে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ‘আল আমিন হোসেন সোহান’ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। পরিবার জানে না এই তরুণ কারাগারে। সন্তানকে না পেয়ে থানায় গেছেন বাবা। বরিশাল টপ টেনের শোরুমে হামলা মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী মাজহারুল ইসলাম সোহান গ্রেপ্তার এড়াতে তার পরিচয়ে আরেক জনকে কারাগারে পাঠানোর খবর প্রকাশের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। প্রকাশ পেয়েছে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সোহানের পরিচয় কারাগারে গেছেন তারই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী আল আমিন। তবে আল আমিন যে কারাগারে এটা জানে না তার পরিবার। সাত দিন ধরে নিখোঁজ থাকায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছে পরিবারটি। কুয়াকাটা ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ৮ মার্চের পর বাড়িতে ফেরেনি আল আমিন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে রোববার থানায় যান তার বাবা ইউনুস আরিন্দা। নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে টপ টেন শো রুমে হামলার ঘটনায় ‘নকল’ আসামির আত্মসমর্পণ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বরিশালে। নিউজ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে পুলিশের। অভিযোগ, মামলার ২১ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সোহান তার ইন্টারনেট ব্যবসার কর্মচারী আল আমিনকে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ‘আল আমিন হোসেন সোহান’ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা ইউনুস আরিন্দা ও ফুলবানু বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আল আমিন। বড় দুই বোন এবং বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাবা-মায়ের সঙ্গে একা থাকেন তিনি। সোমবার আল আমিনদের বাসায় তার বড় বোন সালমা আক্তার বলেন, ‘আল আমিন বর্তমানে টিটিসিতে পড়াশুনা করে। এবারে সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। সোহান নামে একটি ছেলের সাথে ওঠা বসা ছিল আমার ভাইয়ের। আল আমিন আলাদা আর সোহান আলাদা লোক। দুইজনে এক লোক না। ৮ তারিখ বাসা দিয়া খেলার কথা বইলা বের হয়। পরে কল কইরা জানায়, যে কুয়াকাটা যাইতেছে ঘুরতে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় খুঁজছি আমরা পাই নাই। আজকে আব্বায় থানায় গেছে খোঁজ নেতে, আর জিডি করতে।’ আল আমিনের জন্ম নিবন্ধনের কার্ড, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদ এবং অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, তার জন্ম ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে বয়স ১৬ বছর। তবে মামলার এজাহারে সোহানের বয়স ২১ বছর। লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা এবং আল আমিনের বন্ধু মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘আল আমিন ও আমি একসঙ্গেই বিভিন্ন এলাকার টুর্নামেন্টে খেলতে যেতাম। খেলাধুলার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল তার। ৬-৭ দিন হয়ে গেছে, দেখা হয় না। আল আমিনের আম্মার কাছেও জিজ্ঞাস করছি, কিন্তু তারা কিছু জানেন না।’ আরেক বন্ধু সজল বলেন, ‘আল আমিনের নাম তো আল আমিনই। ওর আলাদা কোনো নাম নাই। সোহান তো আলাদা লোক। সোহান মাঝে মধ্যেই দলের প্রোগ্রামে আল আমিনকে (নিত) বিএম কলেজের সামনে। সোহানের সাথেই থাকতো বেশি সময়।’ নগরীর শের-ই বাংলা সড়কে ছাত্রলীগ কর্মী সোহানের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবা নুরুল ইসলাম জানান, ১০ তারিখ পর্যন্ত বাসায় ছিল সোহান। এরপর থেকে সোহানের খোঁজ তাদের কাছে নেই। স্থানীয় একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন, টপ টেনে হামলা ও লুটের মামলায় নামধারী ১৪ আসামি ৯ মার্চ দুপুরে আত্মসমর্পণ করলেও সোহান তার অনুসারী আল আমিনকে নিজ পরিচয়ে আত্মসমর্পণ করান। ৯ মার্চ দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও আসামি সোহানকে সেদিন সন্ধ্যায় সরকারি ব্রজমোহন কলেজে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়। অনুষ্ঠানের ভিডিওতেও দেখা গেছে তাকে। ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, সংবাদ প্রকাশের পর শনিবারই সোহান নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বরিশাল ছাড়েন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানিয়েছিলেন। টপ টেনে হামলা ও লুটপাটের সিসিটিভি ফুটেজে মাজহারুল ইসলাম সোহানকে স্পষ্টই দেখা যায়। তিনি মামলার অন্যতম আসামি জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মারুফ হাসান টিটুর পাশেই মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন। মামলায় ২১ নম্বর আসামি হিসেবে সোহানের নামও রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ওই ছেলেটি নিজেই তার নাম আল আমিন হোসেন সোহান বলেছেন আমার কাছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই এবং তদন্ত চলছে।