কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ দেখলে মনে হবে যেন কোন এক দ্বীপ, গ্রামের চার পাশে শুধু পানি আর পানি, দ্বীপের মাঝখানে ছোট্ট ছোট্ট ঘরবাড়ি। প্রায় চারশ পরিবারের হাজারো লোকের বসবাস সেরকম ই এক গ্রামের নাম চরআলগী গ্রাম। কৃষি কাজ করেই সংসার চলে এখানকার লোকজনের। প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ গ্রামটি দিনের আলোয় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যে হলেই নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। রাতের অন্ধকারে যেন নিমিষেই তলিয়ে যায় জলের অতল গহ্বরে।
চরআলগী গ্রাম টি পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের কিশোরগঞ্জের জেলায় অবস্থিত।ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে এ গ্রামটির অবস্থান খুবই অবহেলিত ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে দ্বীপের মতো গড়ে উঠা এ গ্রামটি। সম্প্রতি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এ গ্রামের প্রায় দুইশটি পরিবার। এর ফলে দীর্ঘদিনের আঁধার কেটেছে চরআলগী গ্রাম বসীর।
যেখানে কয়েক দিন আগেও সন্ধ্যে হলেই আঁধার নামতো সেখানে এখন আলোয় ঝলমল করছে। বিদ্যুতের আলোয় চারপাশের জলরাশিও ঝিলমিল করছে। বিদ্যুৎ পৌঁছায় ভিন্ন এক স্বাদ পাচ্ছেন এখানকার চরআলগী গ্রামের লোকজন। সেখানে দিন আর রাতে একই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে জনজীবনে।
যেখানে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা হারিকেন জ্বালিয়ে কিংবা সৌরবিদ্যুতের ঝিমঝিম আলোয় পড়ালেখা করতো সেখানে আজ বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক নতুন উৎসব শুরু হয়েছে এবং পড়াশোনায় উৎসাহ বেড়ে গেছে অনেক।
কৃষি কাজ ই এ গ্রামের লোকজনের প্রধান পেশা। তাছাড়া সাক সবজি উৎপাদনেও এ গ্রামটির রয়েছে সুখ্যাতি। বিদ্যুৎ পৌঁছায় স্বল্প সময়ে অল্প খরচে অধিক ফসল ফলিয়ে লাভের আশা করছেন এখানকার কৃষকরা। আর এর মধ্য দিয়ে এ এলাকার চাষীদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, চরাঞ্চলের সবজি খ্যাত এ গ্রামটি বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার ফলে কৃষিতে আধুনিকায়নর পাশাপাশি কৃষিতে নতুন বিপ্লব ঘটবে। পাশাপাশি অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার মুক্ত হয়ে একটি আদর্শ গ্রাম হবে চরআলগী এমনটাই আশা স্থানীয়দের।
ওই গ্রামের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন জানায়, হারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করতে অনেক অসুবিধা হতো। মনোযোগ থাকতো না, এখন সেই সমস্যা আর থাকছে না। বিদ্যুতের আলোয় এখানকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় বাড়তি উৎসাহ পাবে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে এ গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। এবং বিদ্যুৎ পাওয়ায় সেচের মাধ্যমে অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে ফসল উৎপাদন করা যাবে। এতে এখানকার কৃষকেরা লাভবান হবেন।
চরআলগী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক এ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াতে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সংসদ সদস্যের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, নূর মোহাম্মদ (এমপি) বলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলার চরাঞ্চলের ওই গ্রামটি খুবই অবহেলিত। নদী ভাঙ্গনের সময় আমি ওই গ্রামটি পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা ও করেছি। এবং বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটসহ গ্রামটির উন্নয়নে আমি তাদের আশ্বাস দিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ পৌঁছেছে দিয়েছি , ক্রমান্বয়ে রাস্তাঘাটসহ সকল উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি ।