শীতের সকালের ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে
শিশির ভেজা দুর্বাঘাসের পথ পেরিয়ে
ছোট্ট খিনখিনে শুকনো নদী পাড়ি দিয়ে
ছুটে চলবো নির্বাক তোমার পানে চেয়ে
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে।
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে,
নদী তীরের সেই রক্তলাল কৃষ্ণচূড়ার মিছিলে
টকটকে লাল শিমুল ফুলের বিশাল সারিতে
চারদিকের লাল হলুদ আর সাদা পলাশের বেষ্টনীতে
কনকচাঁপা আর সোনালু ফুলের কমলা হলুদে
আমি তোমাকে নয়ন ভরে দেখবো অপলকে।
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে,
পারিজাতের লালে রাঙাবো তোমার ওষ্ঠ
নাগকেশরের হলুদে ভরাবো তোমার মুখয়ব।
গোলাপী সাদা মধুমঞ্জুরীর আবেশ চাদরে
জড়িয়ে রাখবো আমার শুকিয়ে যাওয়া
ঝিলে আর কাদা জলের শুকনো বিলে।
মধুমঞ্জুরীর সেই আদর আবেশের তাপে
বিভোর থাকবে তুমি ফাগুন থেকে বর্ষা পর্যন্ত।
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে
সাদা ভাঁটফুলে সাজিয়ে দেবো তোমার অঙ্গ;
গ্রীবার তিল তুলতুলে গাল চিবুকের চওড়া
আর আমাকে ধ্বংসের তোমার ভ্রুযুগল।
ভাঁটফুলের সব সাদা পাপড়ি ঝরিয়ে দিয়ে
এক উন্মাদ প্রেমোস্নানে মাতিয়ে দেবো।
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে,
সজিনা ফুলের সাদা গালিচার উপর
লক্ষ ক্রোশ মাইল পথ হাঁটবো তোমার হাত ধরে।
দিগন্তের সব মটরশুঁটি খেসারি আর মসূর ক্ষেতের
লম্বা লম্বা আইল পাড়ি দিবো তোমার চুলের গন্ধে।
তারপর বড্ড ক্লান্ত বেশে আম্র কাননে
আম্র মুকুলের ঘ্রাণে প্রেমোউন্মাদে
পাগল হবো আমি, আর পাগল হবে তুমি।
লজ্জার সমস্ত ভ্রুযুগলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
সল্প পানির প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কলমিলতার মত
তুমি আমি জড়িয়ে থাকবো কাঁঠালচাপার গন্ধে।
এরপর কাঠগোলাপের সব সাদা খসে খসে পড়বে
ঝর্ণার শুকিয়ে যাওয়া নদীতে, জলের তলের কাদাতে।
সেই গন্ধে ডুবে যাবো আমি, ডুবে যাবে তুমি।
তারপর তোমার চুলের গোছায় ঠিক কানের উপরে
আমার প্রেম স্মারক একটি হলুদ গাদাফুল গুঁজে দিবো।
যদি আবার দেখা হয় কোনো এক ফাল্গুনে,
পাহাড়চূড়া তন্নতন্ন করে খুঁজে আনবো
সব বাহারি রঙের যত পাহাড়ী ফুল।
নিন্দার বিষ আর কলঙের সব দাগ
ফাগুনের পুষ্পস্নানে ভাসিয়ে দিয়ে
তুমি আমার হবে আর আমি হবো তোমার।
যদি আবার দেখা হয় হয় কোনো এক ফাল্গুনে…….
লেখক: আসিফ ইকবাল আরিফ
শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।