নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  

জীবনের নানা রুপ, নানা রং। সেইসঙ্গে প্রকৃতি ও মানব উন্নয়ন। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি দুর্দান্ত গতিতে।

এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের প্রতিবেদনে তিস্তা ব্যারেজ নিয়ে।

এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প। এটি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী এবং পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলাধীন খালিসা চাপানী ইউনিয়নে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত। এই তিস্তা ব্যারেজের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৪৪ টা গেইট রয়েছে। এই ৪৪ টা গেইটের কাজ হল, পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রেখে এখান থেকে পুরো পানির ফ্লোটাকে পূর্ব-পশ্চিম পাশের গেইটের Canel Head Regulator (CHR) এ নেওয়া হয়। এই CHR এর ৮ টি গেইট রয়েছে। এই CHR এর কাজ হচ্ছে, পানির প্রবাহটাকে নিয়ন্ত্রণ করে যতটুকু পানি প্রয়োজন ততটুকু পানি ওপাশে সেচ প্রকল্পের জন্য পাঠানো হয়।

এই তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার অন্যতম একটা শক্তিশালী উপায় হচ্ছে, বন্যার সময় যখন পানির উচ্চতা বেড়ে যায় সেই উচ্চতা যেনো এই ব্যারেজের কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাই ব্যারেজের উত্তর পাশে একটি বাইপাস পথ তৈরি করা হয়েছে। যাকে বলে Flood Bypass.
মূলত এই তিস্তা ব্যারেজ যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ৪.৫ লক্ষ কিউসেক পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হতে পারে। তার থেকে বেশি মাত্রার পানি যদি প্রবাহিত হয় তবে সেই পানিকে এই Flood Bypass দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। এই Flood Bypass এর বিপদসীমা হল ৫৩.৯৫ মিটার।

তিস্তার পানিতে স্বাভাবিকভাবে প্রচুর পরিমাণে পলি & বালু থাকে। পলি জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়।
ব্যারেজ থেকে অদূরে জলঢাকা ক্যানেলে খালের পানিকে নদীতে পাঠানো হয়। আরোও কিছুদূরে দুন্দিবাড়ি পয়েন্ট। এটি মিলিত নিয়ামক। এটি মূলত জাংশন পয়েন্ট। এখান থেকেই Dinajpur Secondary Canel এর উৎপত্তি। অর্থাৎ এই খালটা এখান থেকেই দিনাজপুরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। অত্র এলাকার সমগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে মূলত তিস্তা ব্যারেজকে কেন্দ্র করেই।
এই তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প এলাকায় সর্বমোট জমির পরিমাণ প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর।
তিস্তার প্রধান খাল ৩৩ কি.মি. যাত্রা করার পর জাংশন পয়েন্টে ২ টি প্রধান সেকেন্ডারি খালে বিভক্ত হয়ে গেছে। বগুড়া প্রধান সেকেন্ডারি খাল (৩৪ কি.মি. বিস্তৃত)। যখন বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে খালগুলোতে সেচের জন্য পানির প্রয়োজন হয় তখন বগুড়া সেকেন্ডারি খালের গেইট খুলে দেওয়া হয়। তখন পানি প্রবাহ বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ২য় টি হল রংপুর প্রধান সেকেন্ডারি খাল (২৮ কি.মি. বিস্তৃত)। যখন রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের খালগুলোতে সেচের জন্য পানির প্রয়োজন হয় তখন রংপুর প্রধান সেকেন্ডারি খালের গেইট খুলে দেওয়া হয়। তখন পানি প্রবাহ রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

যমুনেশ্বরী নদীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া বগুড়া প্রধান সেকেন্ডারি খাল। এখানেই অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় Water Bridge. এই Water Bridge এর মাধ্যমেই যমুনেশ্বরী নদীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বগুড়া প্রধান সেকেন্ডারি খাল। এই Water Bridge এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২১৮ মিটার।

এই তিস্তা ব্যারেজের রক্ষণাবেক্ষণ, নকশা, কারিগরি সবকিছুই করা বাংলাদেশীদের দ্বারা। আর এই ব্যারেজ পরিচালিতও হচ্ছে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা।

লালমনিরহাট জেলার অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এই তিস্তা ব্যারেজ। তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে বিনোদন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তিস্তার ব্যারেজের উজানে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, সেচ বাইপাস খাল, বনায়ন আর পাথর দিয়ে বাধাঁনো পাড় সব মিলে এক মনোরম পরিবেশ। শীতকালে এখানে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।