রমযানুল মুবারকের পর আরবি চান্দ্রবৎসরের দশম মাস হলো শাওয়াল। এ মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী। মাসটির রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য। পবিত্র ঈদুল ফিতর, জাকাত, দান-সদকা, ইসলামের ফরজ বিধান আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন হজ ও জিয়ারতসহ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় রমজান মাসের নির্ধারিত ইবাদতের পর এই মাসের ইবাদতের গুরুত্ব অত্যধিক। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ছয় রোজা। ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসূল (সা.) নিজেও শাওয়ালের রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও রাখার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। শাওয়াল মাসে রোজার বিধান : সংখ্যাগরিষ্ঠ ওলামায়ে কেরামের মতে শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখা সুন্নত। ফরজ বা ওয়াজিব নয়। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল। হজরত ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, প্রতি মাসের ৩ দিন রোজা রাখার মতো শাওয়ালের ৬ দিন রোজা রাখাও ভালো আমল। আল্লাহ তায়ালা ফরজ ইবাদতের পর সুন্নত ও নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ ও নির্দেশনা দেন। শাওয়াল মাসে রোজার ফজিলত : সারা বছর রোজার সওয়াব হবে শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখার মাধ্যমে। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪; আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৩)। এক বছরের রোজার সওয়াব এভাবে হয় যে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমের সুরা আনআমের ১৬০ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে সে দশগুণ বেশি সওয়াব পাবে।’ সে হিসেবে রমজানুল মোবারকের ত্রিশ রোজা তিনশ রোজার সমান হলো। আর শাওয়ালের ৬টি রোজা ষাট রোজার সমান। এভাবে ৩৬টি রোজা বছরের মোট তিনশ ষাটটি রোজার সমান হয়ে গেল। তা ছাড়া অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত সাওবান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি : ২/১৬২)। ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, মাহে রমজানের পর শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখা পূর্ণ এক বছরের ফরজ রোজার সমান। তেমনি সাধারণভাবে নফল রোজার সওয়াবও বেশি হওয়া প্রমাণিত। কেননা একটি নেকি দশটি নেকির সমান। হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি : ১/১৫৭)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখে সে গোনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেমন নবজাতক মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় গোনাহ থেকে পবিত্র থাকে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব) শাওয়াল মাসে রোজার উপকারিতা : এ রোজা সুন্নত নামাজের মতো। সুন্নত নামাজ যেমন ফরজ নামাজের উপকারিতা ও অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতাকে দূর করে এবং তাতে কোন ত্রুটি থাকলে তা দূর করে থাকে। আর অতিরিক্ত ৬টি নফল রোজার সওয়াব তো আছেই। হাশরের দিন ফরজ আমলে সৃষ্ট ত্রুটি-বিচ্যুতিকে নফলের মাধ্যমে পুরা করা হবে। শাওয়াল মাসে রোজা রাখার নিয়ম : শাওয়ালের রোজা রাখার উত্তম সময় হলো ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ তাতেই রয়েছে নেক আমলের প্রতি দ্রুত ধাবিত হওয়ার প্রমাণ। রোজাগুলো শাওয়ালের ২ তারিখ হতেই আরম্ভ করতে হবে এমনটা জরুরি নয়। ধারাবাহিকভাবে রাখতে হবে এটাও জরুরি নয়। মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ২/১টি রেখে মাঝখানে বিরতিও দেওয়া যাবে। সোম এবং শুক্রবারও রাখা যাবে। আইয়ামের বিয তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সাথে মিলিয়েও রাখা যাবে। ২/১টি রোজা রেখে বাকিগুলো না রাখলেও অসুবিধে নেই। এর কাজা করা লাগবে না। কেউ প্রতি বছর রোজাগুলোর গুরুত্ব সহকারে রাখলে কোনো বছর না রাখতে পারলেও গোনাহগার হবে না। রমজানের রোজা কাজা থাকলে কাজা রোজাগুলো আগে আদায় করে নেওয়া উত্তম। তবে শাওয়ালের রোজা আগে রাখলেও অনুমতি আছে। নবীজি (সা.) এর স্ত্রীগণও রমজানের ছুটে যাওয়া রোজাগুলো সাধারণত ১১ মাস পর শাবান মাসে আদায় করতেন। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন। আমিন। শেখ আব্দুল্লাহ উসামা ফাযেল দারুল উলুম হাটহাজারী চট্টগ্রাম