কাপ্তাই ( রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধিঃ  “সুদীপ ব্যাপারী” রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেৃলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা এলাকার ব্যাপ্টিষ্ট মিশন এলাকায় বসবাসরত একজন শিল্পি তথা প্রশিক্ষক। এই শিল্পির ডাক নাম “বাবু”। সুদীপ ব্যাপারী ওরফে বাবু নামের শিল্পি মানুষটাকে চেনেন না,জানেন না এরকম মানুষ এই চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকায় কিংবা কাপ্তাই কিংবা পাশর্^বর্তী উপজেলায় খুব কম আছে। প্রতিভার গুনে গুনান্বিত,বহুবিধ সংগীতের সাথে যার পরিচয়,নানরকম বাদ্যযন্ত্রে যার পারদর্শিতা,স্বদেশের সংগীত গুরুর কাছে যার হাতে কড়ি,উপমহাদেশের অর্থাৎ ভারতের অনেক সংগীত ওস্তাদদের অনুষ্ঠান দেখার বা উপভোগ করার সুযোগ যার হয়েছে এক কথায় ব্যক্তি জীবনে সংগীতই যার তপস্যা,সাধনা,ব্রত; সেই মার্জিত,সদালাপী,হাস্যোজ্জ্বল,নম্র,বিনয়ী,প্রানবন্ত,নির্ঝঞ্জাট মানুষটা আর কেউ নন,তিনি হলেন সুদীপ ব্যাপারী(বাবু)।

অনেক প্রতিভার স্বাক্ষর যিনি রেখে চলেছেন তাঁর সর্ম্পকে লেখনীর মাধ্যমে কিছু তোলে ধরার প্রয়াসমাত্র।

আমি(প্রতিবেধক) নিজেও তাঁর সান্নিধ্যে সংগীতে তালিম নিয়েছি,বাদ্যযন্ত্রেও শিক্ষা গ্রহন করেছি।যন্ত্রশিল্পি(অক্টোপ্যাড) হিসাবে এবং কীবোর্ড বাজিয়ে গান পরিবেশনও কেেরছি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে এই গুনী শিল্পির সাথে। মনোবল আর অদম্য আগ্রহ পেয়েছি এই শিল্পির সাহচর্য,সহযোগিতা আর আন্তরিকতা প্রাপ্ত হয়ে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। অমায়িক,মিষ্টভাষী এই গুনী শিল্পি আমার বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে কিছুটা ভুলত্রæটি হলে তা তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ সদালাপ দ্বারা সংশোধন করে দিতেন।যন্ত্রশিল্পি হিসাবে ওনার মাধ্যমেই জীবনে আমি প্রথম মঞ্চ প্রোগ্রাম করি এবং এখনো করছি।তাইতো এই গুনী,প্রতিভায় ভাস্বর শিল্পির কিছু কথা আমার লেখনীতে লিখতে পেরে আমি গর্বিত।

সর্বপ্রথম তিনি সংগীত গুরু ওস্তাদ পুস্প বড়–য়ার কাছে সংগীতে এবং বাদ্যযন্ত্রের উপর হাতে কলমে শিক্ষা নেন।ওস্তাদ পুস্প বড়–য়া তাঁকে গজল গীতির প্রতি বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেন।বাদ্যযন্ত্র বিশেষ করে তবলা,হারমোনিয়াম,তানপুরা,উচ্চাঙ্গ সংগীত এসব বিষয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন।এরপর ঢাকায় ওস্তাদ আনোয়ার হোসেনের কাছে বাদ্যযন্ত্র “বেনজু” শিখেন।

পরবর্তীতে ভারতে যান এই শিল্পি সুদীপ ব্যাপারী।ভারতের কলকাতায় অবস্থান করে প্রখ্যাত ওস্তাদ প্রফুল্ল পর্বত এর কাছ থেকে ক্লাসিক্যাল সংগীত এবং বাদ্যযন্ত্র (তারযন্ত্র) সেতার,মেন্ডোলিন করায়ত্ব করেন।

সুদীপ ব্যাপারী(বাবু) পরবর্তী সময়ে চন্দ্রঘোনা ব্যাপ্টিষ্ট মিশন এলাকায় একজন বৃটিশ ওস্তাদ এর কাছ থেকে লীড গীটার এবং ব্যাজ গীটার উভয় বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন।

একটা সময়ে এই সংস্কৃতিশিল্পি নিজের ঐকান্তিক আগ্রহ এবং প্রচেষ্টায় দোতরা বাজানো শিখেন।

উল্লেখ্য ভারতের কলকাতায় অবস্থ্ানকালে এই শিল্পি কলকাতার ইনডোর ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অনেক স্বনামধন্য ওস্তাদ তথা শিল্পিদের সংগীতানুষ্ঠান উপভোগ করেন। স্বনামধন্য সেই সব ওস্তাদদের মধ্যে ওস্তাদ আল্লাহ রেখা,ওস্তাদ আলাউদ্দীন,ওস্তাদ জাকির হোসেন,হরিপ্রসাদ প্রমুখ গুনী শিল্পিজনের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে সক্ষম হন।

সংগীত তথা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে প্রশিক্ষিত ও পারদর্শী শিল্পি সুদীপ ব্যাপারী(বাবু) ১৯৮৭ সালে সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে নিজ এলাকা(চন্দ্রঘোনা) তথা পাশর্^বর্তী বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষকতায় নিজেকে আতœনিয়োগ করেন।

চন্দ্রঘোনার দোভাষী বাজার সংলগ্ন চন্দন বাবুর মার্কেটে মিউজিক এন্ড ভোকাল ট্রেনিং ইন্সস্টিটিউট প্রতিষ্টা করেন।এ প্রতিষ্ঠানে গীটার,হারমোনিয়াম,তবলা,কীবোর্ড,বেহালা,ড্রাম এবং গান শিখানো হয়।সার্বিক সহযোগিতায় তাঁর সাথে আছেন অমিত বড়–য়া(ড্রামার প্রশিক্ষক) এবং সংগীত প্রশিক্ষনার্থী উদয় শংকর পাল(বাবু)।

পারিবারিক জীবনে স্ত্রী,দুই কন্যা ও এক ছেলে। মেয়ে দুটোকেই গান শিখিয়ে পারদর্শী করেছেন।তারই সাফল্য রেখে চলেছে বড় মেয়ে যে কিনা সংগীতের ক্ষুদে শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করছে এবং অন্য কন্যা সন্তান সংগীতে উপজেলা-জেলা-জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করে সুনাম অর্জন করেছে।

অমায়িক,সদালাপী গুনী এই শিল্পি সুদীপ ব্যাপারী(বাবু)’র বিশেসত্ব হল-ব্যান্ড,ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত উভয়ই তাঁর পছন্দ।

বাস্তব জীবনে এই শিল্পি সংগীতকে মনে প্রাণে আঁকড়ে ধরে আছেন।তিনি এক সময় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী,কাপ্তাই এর সংগীতশিল্পি মোঃ হেলাল ভাই এর সহযোগিতায় শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিতেন এবং বিভিন্ন সংগীত বিষযক অনুষ্টানে পারর্ফম করতেন। সাফল্যস্বরুপ সংগীতে ১৯৯০ সালে কৃতিশিল্পি হিসাবে পদক লাভ করেন।এছাড়া কে,আর,সি,ভিউ ক্লাব তাঁকে সংগীতে সম্মামনা পুরস্কারে ভুষিত করেন।সাথে সাথে নানারকম সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করেন যা এখনো চলমান।

প্রতিবেদকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মিষ্টভাষী সুদীপ ব্যাপারী বলেন,“চেস্টা করি নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে সব ছাত্র-ছাত্রীদের(প্রশিক্ষণার্থী) মাঝে ঢেলে দিয়ে সংগীতে পারদর্শী করে তোলতে। তিনি আরো বলেন, যে যেরকম গান বা যা কিছু(বাদ্যযন্ত্র)যেভাবে শিখতে পছন্দ করে তাকে(প্রশিক্ষণার্থী) সেভাবে শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলতে চেষ্টা করি। আর এভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে গড়ে তোলে সাফল্য লাভ করতে পারাটাই আমার আতœতৃপ্তি।”

পরিশেষে এই গুনী শিল্পির দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি