
উল্লেখ্য,বি,সি,আই,সি’র নিয়ন্ত্রণাধীন এই শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল্স লিমিটেড ১৯৫৩ সালে কাগজ উৎপাদন শুরু করে।তখন থেকে ব্যাপকহারে নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে প্রচুর উৎপাদন অব্যাহত রেখে সচল ছিল এই কাগজ কল। ছিল দক্ষ জনবল, ছিল মেশিনারী সব কিছু সচল। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়,আজ এই কর্ণফুলী পেপার মিল্স লিমিটেড এর ০৩ টি মেশিনের মধ্যে ১নং ও ৩ নং মেশিন সচল রয়েছে যাহা দ্বারা যথাক্রমে ক্রীমলেইড(রাইটিং প্যাড/সাদা কাগজ) এবং মোটা কাগজ(বাইন্ডিং এর জন্য কাগজ)উৎপাদন করা হয় যেগুলো হতে দৈনিক গড় উৎপাদন ২৮/৩০ টন। বর্তমানে কাঁচামাল সরবরাহ হয় “ফরেইন পাল্প”।২নং মেশিনটি যান্ত্রিক ত্রূটিজনিত কারনে বন্ধ ছিল,যা কিনা ইতিমধ্যে মেরামত করা হয়েছে এবং সক্রিয়করনের প্রক্রিয়ায় আছে।অতি দ্রুত এই ২নং মেশিন দ্বারা ক্রীমলেইড(সাদা কাগজ/রাইটিং প্যাড) উৎপাদন শুরু করা হবে বলে বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেল।এতদপ্রসঙ্গে আরো জানা গেল, ২নং মেশিন সক্রিয় করা মাত্রই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার হার দ্বিগুন হবে বলে আশা করা যায়। ৩নং মেশিন দ্বারা শুধুমাত্র প্রয়োজননিরীখে মোটা কাগজ( বাইন্ডিং এর জন্যে) উৎপাদন করা হয়।
এখানে আরো উল্লেখ্য, তৎপূর্বে কাঁচামাল বাঁশের মন্ডের মাধ্যমে কাগজ উৎপাদন হত,এখন সেই কাঁচামাল সরবরাহ নেই বিধায় ফরেইন পাল্প সংগ্রহ র্পূবক বিভিন্ন প্রকার কাগজ উৎপাদিত হয়।এই উৎপাদিত কাগজের মূল ক্রেতা হলেন এন,সি,টি,বি; কারিগরী শিক্ষার্বোড; বি,এস,ও এবং পাবলিক ইউনিভার্সিটি।মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারনে ঐ সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয়ের কোন অর্ডার না দেওয়ায় দৈনিক গড় উৎপাদিত সর্বমোট ১০০০ টন কাগজ বর্তমানে মজুদ আছে।কর্তৃপক্ষ আশা করছেন,শীঘ্রই এসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মহামারী পরিস্থিতি সামলে নিয়ে কাগজ ক্রয়ে এগিয়ে আসবেন।এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে আনুমানিক ৩০০ জন স্থায়ী কর্ম্কর্তা-কমর্চারী-শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।এছাড়া আরো প্রায় ৬০০ জন অস্থায়ী শ্রমিক-কর্ম্চারী প্রতিষ্ঠানটিতে কর্তব্যরত।সকলের বেতন ভাতাদি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংস্থাধীন কে,পি,এম লিঃ কর্তৃপক্ষ বহন করেন।আরো উল্লেখ্য, কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত ০৩ টা মেশিনের ২টিই সার্বক্ষনিক অর্থাৎ ২৪ ঘন্টাই উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।বিভিন্ন শিফটে ভাগ হয়ে শ্রমিক-কর্ম্চারী-কর্ম্কর্তাগণ তাঁদের স্বীয় দায়িত্ব পালন করে কাগজ উৎপাদন অব্যাহত রেখে কে,পি,এম লিঃ এর সুনাম ধরে রাখতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।যদিও লোকসানহেতু শিল্প মন্ত্রণালয় এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং এ ব্যাপারে সাড়া দিয়ে চীন,জাপান,কোরিয়া এই তিনটি দেশ আগ্রহ দেখিয়ে কে,পি,এম লিঃ পরিদর্শ্নও করেছিলেন,তবে এর সফলতা এখনো চোখে দৃশ্যমান হয়নি।
ইতিমধ্যে উৎপাদনক্ষমতা ১ লক্ষ টন করার লক্ষ্যে কে,পি,এম লিঃ এর মেশিনারী থেকে শুরু করে সব কিছুতে পরিবর্ত্ন আনয়নের লক্ষ্যে অর্থাৎ সম্পূর্ণ্ নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠাকল্পে একটা ব্যাপক ও সূদুরপ্রসারী প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা ফাইল আকারে বি,সি.আই,সি এর মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে যাহা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় আলাপ-আলোচনা,বিচার-বিশ্লেষণ করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য,উৎপাদিত কাগজের মূল্য নির্ধারিত হয় টন প্রতি।
বর্তমানে কে,পি,এম লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে করতব্যরত আছেন প্রকৌশলী জনাব ডঃ এম,এম,এ,কাদের, যিনি ২০১৭ সালের ফেব্রূয়ারীতে যোগদান করেন।তাঁরই ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় এশিয়ার এই বৃহত্তম কাগজ কল তার নিজস্ব উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।কে,পি,এম লিঃ এর ম্যানেজম্যান্ট’কে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন কে,পি,এম শ্রমিক কর্ম্চারী পরিষদ(সি,বি,এ)। আর এই সি,বি,এ এর সভাপতি জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন কে,পি,এম লিঃ এর ম্যানেজম্যান্ট এর সাথে সার্বক্ষনিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক-কর্ম্চারীদের স্বার্থ্ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির যথাযথ সমাধান এর মাধ্যমে উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদনের হার বাড়িয়ে তা টিকিয়ে রাখতে প্রানান্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
তাই শ্রমিক-কর্ম্চারী কারো মাঝেই অসন্তোষ নেই এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে পানি,বিদ্যূৎ,গ্যাস এর সরবরাহও স্বাভাবিক।উল্লেখ্য,মাঝে মাঝে যদিও কাঁচামাল ফরেইন পাল্প এর সরবরাহ সংকটে উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে কাগজ উৎপাদন ব্যাহত হয় তবে তা কাটিয়ে উঠতে প্রচেষ্টা চলে। এছাড়া শ্রমিক-কর্ম্চারী-কর্ম্কর্তাদের আবাসস্থলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ,গ্যাস ও পানি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না যে,কে,পি,এম লিঃ এর পাশেই কর্ণফুলী রেয়ন এন্ড কেমিক্যাল্স লিঃ (কে,,আর,সি লিঃ) যা কিনা অতি লোকসানের দরুন ২০০২ সালেই বন্ধ হয়ে যায়।সেই কে,আর,সি লিঃ এর সামনেই একটা সুদৃশ্য ঘড়ি যা আজো তার স্মৃতি বহন করে দন্ডায়মান। যদিও উক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এই সুদৃশ্য ঘড়িটি অকেজো.অচল। এক সময় যার সৌন্দর্য্য এবং সময় দেখতে শ্রমিক-কর্ম্চারী-কর্ম্কর্তা এবং পথচারীরা একটুক্ষনের জন্য হলেও দাঁড়াত,তবে তা আজ কেবল অতীত।
সবকিছুর শেষ কথা,কে,পি,এম লিঃ তার ঐতিহ্য ফিরে পাক,লক্ষ্যমাত্রার উৎপাদন অব্যাহত রাখুক এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয় বি,সি,আই,সি প্রদত্ত প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা বাস্তবতার নিরীখে সহানুভূতির সহিত সদয় বিবেচনার্পূব্ক উক্ত কাগজের কারখানাটি সর্ম্পূণ নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাবেন এটাই এলাকাবাসী তথা এ শিল্প প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা।