বিশেষ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার একজন কীর্তিমান ব্যক্তির নাম হাজী ফরিদ উল্লাহ । ইসলামের পক্ষে যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামের নির্ভীক ও আপোষহীন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি । হবিগঞ্জ জেলার ও বিশেষত বানিয়াচং উপজেলার পূর্ববর্তী মাশায়েখগণের হাতেগড়া সৈনিক ছিলেন । দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান বুযুর্গ আলেমদের সাহচর্য ও দোয়া ছিলো তার জীবনের আলোকিত দিক । উপমহাদেশের বিখ্যাত আওলাদে রাসূল পরিবারের সাথে ছিলো তার বিশেষ সম্পর্ক । একাডেমিক সনদে আলেম না হয়েও রাজপথে ধর্মীয় কর্মসূচীসমূহের সরব নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি । ছিলেন আলেমদের রাজপথের রাহবার । হাজী সাহেব হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন তিনি । জীবনভর উলামায়ে কেরামের সাথে থাকার ফলে এমনভাবে আলেমদের দলভুক্ত হয়েছিলেন যে, ঘরে-বাইরে সবাই তাকে আলেমদেরই একজন হিসেবে জানতেন । গতরাত ২রা মার্চ রাত ৯টা ৩০ মিনিটে তিনি রব্বে কারীমের ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তকালের পথিক হয়েছেন । আল্লাহ আখেরাতেও তাকে আলেমদের নূরানী কাফেলায় অন্তর্ভুক্ত করে নিন । বার্ধ্যক্যজনিত কারণে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন । কিন্তু মানসিকভাবে যেকোনো যুবকের চেয়েও দৃঢ় ও আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন । বিশেষত দ্বীনি কোন প্রয়োজন সামনে এলে তিনি যেনো হারানো তারুণ্য নিমিষেই ফিরে পেতেন ।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রাচীনতম দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমৃত্যু সক্রীয় দায়িত্বশীল ছিলেন । আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ. জেলা জমিয়তের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে এক মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি । জেলা জমিয়তের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি । জেলা ও উপজেলার সর্বত্র হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ ও আকাইদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । নিজেকে সর্বদা আলেমদের খাদেম হিসেবে পরিচয় দিতেন ।
মাদানি খান্দানের জন্য আত্মনিবেদিত ছিলেন । তাওহীদি জনতার সিপাহসালার ও যুবসমাজের সাহসের বাতিঘর ছিলেন । বিগত প্রায় ৫০ বছর তিনি ইসলামী আন্দোলন-সংগ্রাম ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সরব ভূমিকা পালন করেছেন । এ দীর্ঘ সময়ে তাকে জেল-জুলুম সইতে হয়েছে । মিথ্যা মামলা ও নানা হয়রানির গ্লানি টানতে হয়েছে । বানিয়াচংয়ের কিংবা পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহের যেকোনো আলেম বা সাধারণ মানুষ কোনো বিপদে পড়েছেন বা ইসলামের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন তো হাজী ফরিদ উল্লাহ সীনা টান করে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন । প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে অন্যায়ের মোকাবেলা করেছেন । জীবনের একেবারে শেষদিকে বানিয়াচংয়ের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামসমূহ থেকে শিরক-বিদআত মূলোৎপাটনে ঐক্যবদ্ধ ও সর্বাত্মক আন্দোলনে তার নীতি নির্ধারণী ভূমিকা ছিলো । জীবনের এই শেষ আন্দোলন যেনো তার সংগ্রামী জীবনের এক সফল সমাপনী রেখা টেনে দিয়েছে । তার ইন্তেকালে একটি সফল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে । তার ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে বানিয়াচংয়ের সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে যে শুন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয় ।
আপোষহীনতা ও দীর্ঘ সংগ্রামমুখর জীবনের জন্য তিনি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন ।
আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করুন ।